খরায় পুড়ছে রাজিবপুর বীজতলা ফেটে চৌচির
আপডেটঃ ৫:২৯ অপরাহ্ণ | আগস্ট ০৭, ২০১৪

আলতাফ হোসেন সরকার, রাজিবপুর, কুড়িগ্রাম থেকে ঃ তাং ৬-৮-১৪
রাজিবপুর সহ আশপাশের বিস্তীর্ণ এলাকাগুলো খড়ার কবলে পড়েছে। গত এক মাসের বেশি সময় ধরে এ অঞ্চলে তেমন বৃষ্টিপাত না হওয়ায় আমন ক্ষেত ও আমনের বীজতলা ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। অনেকে শ্যালো মেশিন দিয়ে ক্ষেতে পানি দিচ্ছেন। কয়েকদিনের মধ্যে বৃষ্টি না হলে আমন আবাদ বিপর্যয়ের মধ্যে পড়বে বলে কৃষকদের আলাপ করে জানা গেছে। এদিকে পানির অভাবে কৃষক পাট নিয়েও বেকায়দায় পড়েছে। পাট কাটার পর ভ্যান ও মহিষের গাড়িতে করে নিয়ে দূরে নদীতে দিচ্ছে পাটের জাগ। এতে অতিরিক্ত খরচ হচ্ছে তাদের। প্রখর রোদে খেটে খাওয়া মানুষ কাজ করতে পারছে না। ফলে উপার্জন প্রায় বন্ধ। ভ্যান চালকরা প্রচন্ড তাপদাহে ভ্যান চালানো প্রায় বন্ধ রেখেছে। কোথাও ভাড়া গেলে অতিরিক্ত টাকা আদায় করছে যাত্রীদের নিকট থেকে। এদিকে বিদ্যুৎ বিভ্রাটও চলছে সমানতালে।
রাজিবপুর উপজেলার কড়াতিপাড়া গ্রামের কৃষক বাদশা মিয়া জানান-এ বছর বোরোধানের সময় কোন বৃষ্টি হয় নি। সামান্য একটু বৃষ্টি হইছে ধান কাটার সময়। ওই বৃষ্টি আমাদের তেমন কোন উপকারে আসে নি বরংচ বোরোধানের মারাত্মক ক্ষতি করেছে। ধান শুকানোর জন্য যে রোদের প্রয়োজন ছিল সেটা আমাদের এলাকায় ছিল না। প্রতিদিনই কিছু না কিছু অল্প আকারে বৃষ্টি হয়েছে। আর এখন ধান গাড়ার সময় কিন্তু কোন বৃষ্টির আলামত পর্যন্ত আকাশে নেই। এভাবে আর কিছুদিন চললে আমন আবাদ বিপর্যয় হতে পারে।
মোহনগঞ্জ ইউনিয়নের বড়বেড়চরের কৃষক শামসুল হক (৯০) জানান, বাপের জিনদিগিও এমন অবস্থা দেখি নাই। ভরা আষাঢ় মাসে কোন বৃষ্টি অয় নাই। ভাবলাম শাউন (শ্রাবণ) মাসে বৃষ্টি অয়ব। অহন বৃষ্টির অভাবে আমরা পাটের জাগ দিবার পারতাছিনা। এই চরের মাটিত গাড়িও চলেনা পাট খেতেই শুকাইয়া যাইতাছে। আমন না হয় শ্যালো দিয়া পানি তুইলা গাড়া যায় কিন্তু পানি বেশি না অয়লে পাট পঁচানো যায় না। অহন আমরা কি করুম আল্লায়ই জানে। এ দিকে বৃষ্টি না হওয়ায় পাট খেতেই মরা শুরু করেছে।
এ ব্যাপারে রাজিবপুর সদর ইউপি চেয়ারম্যান নুর-ই-শাহী ফুল জানান- আমাদের উপজেলাটি চার পাশেই নদী। এই সময়ে একজনের বাড়ি যাইতেও পানি পাড়ায়ায় যাইতে হইত, কিন্তু ভরা বর্ষায়ও পানি নেই। পানি ছাড়া শুধু কৃষকরাই যে বিপদে আছে তা নয়। প্রকৃতির সব প্রানীই পানির জন্য হাহাকার করছে।
রাজিবপুর উপজেলা কৃষি অফিসার আক্তারুজ্জামান এ প্রতিনিধিকে জানান- বৃষ্টি আল্লাহতালার বিশেষ রহমত স্বরুপ। কিন্তু জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে আগের কোন নিয়মই এখন আর ঠিক নেই। বর্ষায় বৃষ্টি নেই, নদীতে পানি নেই, খালবিলে মাছ নেই। আল্লাহতালা বৃষ্টি না দিলে কারও কিছু করারও নেই।