একটি সেতুর অভাবে চরম দুর্ভোগে চর লক্ষ্মীপুরের কয়েক হাজার মানুষ।। নদীতে সেতু না থাকায় নৌকাই তাদের একমাত্র ভরসা ।।
আপডেটঃ ১১:১৯ অপরাহ্ণ | ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২১

মাদারীপুর থেকে ফিরে- মোঃ ইলিয়াছ মোল্লাঃ মাদারীপুরের সদর উপজেলার ছিলারচর ইউনিয়নের চরলক্ষ্মীপুর এলাকা দিয়ে বয়ে গেছে আড়িয়ালখা শাখা নদের বিলপদ্মা নামের নদীটি । আর এই নদীর দু’পাশেই রয়েছে চরলক্ষ্মীপুর নামে বিশাল একটি গ্রাম । পাশের বলাইরচর নামক গ্রামটিও ছিলারচর ইউনিয়নের আওতাধীন । এসব এলাকায় প্রায় ৩০ হাজার মানুষের বসবাস, যারা বিভিন্ন প্রয়োজনে নিয়মিত নদীটি পারাপার হন। কিন্তু নদীতে সেতু না থাকায় নৌকাই তাদের একমাত্র ভরসা । নদীটির দক্ষিণ পারের চরলক্ষ্মীপুর, বলাইরচর, হোসনাবাদ গ্রামসহ কয়েকটি গ্রামের লোকজনকে নদীটি পার হয়ে চিকিৎসা, শিক্ষা, হাট- বাজার করাসহ বিভিন্ন কাজে প্রতিনিয়তই আসতে হয় । এমনকি মাদারীপুর জেলা শহর, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাতায়াতের জন্যও নদীটি পাড়ি দিতে হয় । এসব এলাকার মানুষ তাদের দৈনন্দিন প্রয়োজনে মোটরসাইকেল, অটোরিকশা, সিএনজিচালিত অটোরিকশা প্রভৃতি যানবাহনে যাতায়াত করে । কিন্তু সেতু না থাকায় নদী পার হওয়ার সময় তাদেরকে বিপাকে পড়তে হয়। এছাড়া কৃষকেরা তাদের উৎপাদিত পণ্য বাজারে নেওয়ার ক্ষেত্রে দুর্ভোগের মুখে পড়েন ।

স্থানীয়দের ভাষ্য, আবদুর রশিদ হাওলাদারের হাট ও দক্ষিণে চরলক্ষ্মীপুর মাঝ এলাকায় বিল পদ্মা নদীর উপর একটি সেতু নির্মিত হলে দুই পাড়ের মানুষের কষ্ট যেমন শেষ হতো তেমনই হাজারো মানুষের মধ্যে একটি মেলবন্ধন তৈরি হতো । আবদুর রশিদ হাওলাদারের হাট এলাকার বাসিন্দা বিশিষ্ট সমাজ সেবক আলা উদ্দিন মোল্লা বলেন, এই পয়েন্টে সেতু না থাকায় দুই পাড়ের বাসিন্দাদের খুবই কষ্টের মধ্যে পড়তে হয় । কারন এই পাড়ের বাসিন্দাদের যেমন জায়গা- জমি নদীর ঐ পাড়ে রয়েছে তেমন নদীর ঐ পাড়ের বাসিন্দাদেরও এই পাড়ে জায়গা- জমি রয়েছে । তাই তাদের জীবিকার তাগিদে প্রতিক্ষণেই নদীটি পারাপার হতে হয় । এতে করে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্তসহ সময়ও ব্যয় হচ্ছে । শিরিন জাহান হাই স্কুলের ৯ম শ্রেণীতে পড়ুয়া শিক্ষার্থী জান্নাত আক্তার বন্যার ভাষ্য, বর্ষাকালে আতঙ্ক নিয়ে স্কুলে যাতায়াত করতে হয় । এমন কি নদীতে নৌকা পারাপারের জন্য নির্ধারিত সময়ের চাইতে ১ ঘণ্টা আগে বাড়ি থেকে স্কুলের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিতে হয় । আবার স্কুল থেকে ফিরার সময় এই নৌকা পারাপারের জন্য অনেক সময় বাড়ি ফিরতে রাত হয়ে যায় । মাদারীপুর সরকারী কলেজের মেধাবী শিক্ষার্থী মহসিন আরিফ হাওলাদার কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, আমাদের জন্মের পর থেকেই বিভিন্ন রকম সমস্যার মধ্যে দিয়ে জীবনযাপন করে আসছি । তার মধ্যে আমাদের অন্যতম একটি বড় সমস্যা নৌকা যোগে নদী পারাপার । আর এই নদী পারাপারের সমস্যার কারনে আমাদের এলাকার অনেক ছেলে মেয়ে শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে । বর্ষায় নদীতে প্রবল স্রোত থাকে । এতে শিক্ষার্থীদের ঝুঁকি নিয়ে নৌকায় পারাপার হতে হয় । যার কারনে অনেক অভিভাবক তাদের সন্তানদের স্কুলে যেতে দেয়না । জাসদ নেতা ওবাইদুর রহমান চুন্নু হাওলাদার, বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী আউয়াল হাওলাদার, সমাজ সেবক আবুল বাশার হাওলাদার একই সুরে বলেন, দেশে এখন উন্নয়নের জোয়ার বইছে, ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে । এই এলাকার পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলোতে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে । দুর্ভাগ্যবশত এই এলাকায় মাত্র একটি ব্রিজের অভাবে এলাকার মানুষ কোন রকম উন্নয়নের সুফল ভোগ করতে পারছে না । এই এলাকার মানুষের রোগী বা কৃষিপণ্য পরিবহনে কি যে দুর্ভোগে পড়তে হয় তা নিজ চোখে না দেখে কেউ অনুভব করতে পারবেনা । বর্ষায় নদীতে প্রবল স্রোত থাকে। কমলমোতি শিক্ষার্থীদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নৌকায় পারাপার হতে হয় । ইতি মধ্যে এলাকাবাসী স্থানীয় সাংসদসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের এই পয়েন্টে একটি ব্রিজ নির্মাণের জন্য আবেদন করেছেন বলে দাবী করেছেন অনেকে । আর তাদের দাবীর প্রেক্ষিতে আগামী ১ বছরের মধ্যে এই পয়েন্টে একটি ব্রিজ নির্মাণ করে দিবে বলে আশ্বস্ত করেছেন স্থানীয় সাংসদ । ছিলারচর ইউনিয়নের জনপ্রিয় চেয়ারম্যান মোঃ সাইফুল আলম বাবুল সরদার জানিয়েছেন, ব্রিজটি নির্মাণে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে । আসা করি দ্রুতই ব্রিজটি নির্মাণে স্থানীয় সাংসদসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন । বৃহত্তর এই জনগোষ্ঠীর দুর্ভোগ লাঘবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন এমনটাই প্রত্যাশা এলাকাবাসীর ।